রিগ্যানদা দাঁতে দাঁত চেপে প্রায় গজরাতে লাগলেন, ‘যদি ঝুলনকে রাস্তাঘাটে দেখিস সাথে সাথে মালকোচা মেরে ধরে ফেলবি, তারপর এক গোছা দড়ি দিয়ে কষে বেঁধে সিটি কলেজের ছাত্র সংসদে নিয়ে যাবি।’
আমি ভয় পেয়ে গেলাম, ‘সিটি কলেজে কেন?’
‘ওখানকার জিএস তারেক আমার ঘনিষ্ট বন্ধু। ওখানে নেওয়ার পর আমাকে একটা ফোন করবি।’ রিগ্যানদা একটানা কথা বলে একটু হাঁফাতে লাগলেন।
ঘটনা হয়েছে কি, মামার বাড়িতে বেড়াতে এসে আমি মামাত ভাই রিগ্যানদা’র মাছের প্রজেক্ট দেখতে বের হয়েছি। রিগ্যানদা পাগলা কিসিমের মানুষ। তাই উনার মাছ চাষের কাহিনী শুনে আমরা প্রথমে কেউই পাত্তা দেই নি। কিন্তু ঘটনাস্থলে এসে দেখি এলাহি কারবার। বড় বড় তিনটা পুকুরে উনার মাছেরা হেসে খেলে বড় হচ্ছে। এসব দেখে রিগ্যানদাকে যেই না জিজ্ঞেস করলাম, ‘এত বড় কাজ তুমি একা একা কীভাবে সামলাচ্ছ?’ ওমনি রিগ্যানদা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন আর ঝুলনকে দেখামাত্র বেঁধে ফেলে সিটি কলেজে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিয়ে দিলেন।
ঝুলন রিগ্যানদা’দের প্রতিবেশী। ১৫-১৬ বছর হবে বয়স, খুবই গরীব। তার উপর বাবা মারা যাওয়ার পর ঝুলন লেখা পড়াও ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু ঝুলনের উপর রিগ্যানদা’র রাগের কারণ বুঝতে পারলাম না। আমি না পারতে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, ‘ঝুলনের সাথে তোমার মাছ চাষের সম্পর্ক কী?’
রিগ্যানদা দুঃখিত ভাবে বললেন, ‘ওই বদটাতো আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিল। খাওয়া-দাওয়া সহ মাসে চার হাজার টাকা বেতন দিতাম। হঠাৎ করে একদিন কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে গেল। আমি একলা একলা কী বিপদেই না পড়লাম। সারাদিন মাছ নিয়ে থাকতে থাকতে এখন আমার শরীর থেকে মাছের গন্ধ বের হয়, শুঁকে দেখ।’
আমি শুঁকে দেখার ঝুঁকি নিলাম না। রিগ্যানদা’র শরীর থেকে আগেও বিশ্রী গন্ধ বের হত, নতুন করে মাছের গন্ধ যোগ হয়ে এখন ম্যাসাকার হয়ে যাওয়ার কথা!
ঝুলনকে আমি কিছুদিন আগে লালখান বাজার মোড়ে দেখেছিলাম। আমার মামাবাড়ির প্রতিবেশী বলে ওকে অনেক আগে থেকেই চিনতাম। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে কোথাও যাচ্ছে দেখে ওকে থামিয়ে কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করতেই বললো, ও নাকি বারিক বিল্ডিং যাবে, তাও হেঁটে হেঁটে। আমি অবাক হয়ে গেলাম। লালখান বাজার থেকে হেঁটে বারিক বিল্ডিং গেলে ঘন্টাদুয়েকের বেশী লাগবে। তারপর ওর কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো। পকেটে টাকা নেই বলে হেঁটে হেঁটে যাবে। আমি তো তখন অত কিছু জানতাম না। ১০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে একটা ধমকও মেরেছিলাম, ‘ব্যাটা বদের বদ, সাথে টাকা রাখিস না ক্যান? যা, বাসে উঠে চলে যা।’
কিন্তু ব্যাটা যে রিগ্যানদা’র চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে সেটা তো জানতাম না। রিগ্যানদা বলে যাচ্ছেন, ‘জানিস, ওকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়ে বইপত্রও কিনে দিয়েছিলাম। কতগুলো সুন্দর সুন্দর শার্ট-প্যান্ট কিনে দিয়েছি। অ্যাপেক্স থেকে স্যান্ডেল কিনে দিয়েছি। তবুও বজ্জাতটা পালিয়ে গেল।’
আমি এবার কিছুটা বিরক্ত হই, ‘এত কিছু কিনে দেওয়ার কী দরকার ছিল? বেশী সুখে রাখলেই তো বাঙ্গালীকে ভুতে কিলায়!’
রিগ্যানদা মন খারাপ করে বলতে লাগলেন, ‘বদমাশটাকে তো আমার ব্যক্তিগত সহকারীর মর্যাদা দিয়েছিলাম। মোটসাইকেলের পিছনে করে সব জায়গায় নিয়ে যেতাম। ওকে কিভাবে ছেঁড়া-নোংরা পোশাকে রাখি বলতো!’
রিগ্যানদা’র মন খারাপ ভাব বেশীক্ষণ স্থায়ী হল না। আবার তিনি হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন, ‘এখন আমি সব বুঝতে পেরেছি। অনেক আগে ও একবার আমাকে বলেছিল, ও আর গ্রামে থাকতে চায় না, শহরে যেতে চায়। ব্যাটার শহরে যাওয়া আমি বের করছি। ওর চৌদ্দগুষ্টি সব গ্রামে ছিল, আর বদটা নবাবের পোঁটলা হয়েছে, শহরে যাবে। আমি নিজেই লেখাপড়া শেষ করে গ্রামে পড়ে আছি বছরের পর বছর, আর তুই কোথাকার কোন নবাব রে, ব্যাটা রামছাগল।’
এইবার রিগ্যানদা’র চাইতে আমিই বেশী ক্ষেপে যাই ঝুলনের উপর, ‘ঠিক আছে, তুমি চিন্তা করবে না দাদা, ঝুলনকে আমি একবার শুধু পাই, পিটিয়ে যদি ওর হাড্ডি-গুড্ডি সব একজায়গায় না করি!’
রিগ্যানদা আঁতকে ওঠেন, ‘তোকে কিছু করতে হবে না, তুই শুধু আমাকে খবর দিস, আমিই যা করার করবো।’
তারপর থেকে আমি আরেকবার ঝুলনের দেখা পাওয়ার আশায় তক্কে তক্কে আছি। ব্যাটাকে একবার রাস্তায় পেলেই হবে। মালকোচা মেরে ধরে ফেলবো, তারপর কষে বেঁধে সিটি কলেজে নিয়ে...।
১২ মে - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪